সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায় দেশীয় প্রজাতির ১৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ক্ষতিকারক প্লাস্টিক (মাইক্রো প্লাস্টিক) এর সন্ধান মিলেছে। কাইলবাউশ, রুই, কই, বেলে, টেংরা, বাটা, তেলাপিয়া, কমন কার্প, পাবদা, পুঁটি, রয়না, শিলং, বাইম, টাটকিনি ও বাছা প্রজাতির মাছসহ কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টি পানির জলাধারে চাষ করা মাছে এই নমুনা ধরা পড়েছে। গবেষণায় ব্যবহৃত মাছগুলি সাভার ও আশুলিয়া বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ সকল মাছে ৭৩.৩% ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে।
গবেষণায় জানা যায়, টেংরা, টাটকিনি, রয়না বা মেনি মাছে প্লাস্টিকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এসব মাছে পলিপ্রপিলিন পলিথিলিন কপোলিমার, হাই ডেনসিটি পলিথিলিন ও ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট প্লাস্টিক পলিমারের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের একজন শিক্ষার্থী্র থিসিসের জন্য এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক ও সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা পারভিন। সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্যা টোটাল ইনভায়রনমেন্টে’ প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
এসব প্লাস্টিক কণা সরাসরি খাদ্যের সাথে মানুষের দেহে প্রবেশ করে না। তবে এগুলো থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত রাসায়নিক মাছের দেহ বা মাসলে জমা হয়। পরে এসব মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের দেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির সক্ষমতা রাখে। এই প্লাস্টিক পলিমার দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, মোড়ক, জুস, ব্যাগ, শ্যাম্পু, ইত্যাদি থেকে পরিবেশে প্রবেশ করে। জানা গেছে, যেসব মাছ পানির সবচেয়ে নিচের স্তরে বাস করে তাদের মধ্যে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি।
প্লাস্টিকের এমন ক্ষতির হাত থেকে কি করে বাঁচা যায়, প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, “আমাদের সাসটেইনেবল প্লাষ্টিক ম্যানেজমেন্ট পলিসি ডেভালপ করতে হবে। যার মাধ্যমে প্লাষ্টিকের সেই অংশ যেটা আমরা পুনরায় ব্যবহার করতে পারি সেটা আমরা পরিবেশে ফেলে রাখবো না।এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্লাষ্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিকের দ্রব্য ফেলা শূন্যে নামাতে হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর সুরক্ষা সামগ্রী প্লাস্টিক হওয়ায় আগামী কয়েক বছর পরে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে, এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটা নিয়েও ভাবতে হবে।”